ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন বিধান। মুমিনের এমন কোনো কাজ নেই, যা শরিয়তের গণ্ডিতে নেই। মুমিনের প্রতিটি কাজেই হয়তো সওয়াব লেখা হবে, না হয় গুনাহ লেখা হবে। যে কাজ রাসুল (সা.)-এর কাজের সঙ্গে মিলে যাবে, তাতে পুণ্য হবে। আর যা মিলবে না বা অন্য কোনো জাতির সংস্কৃতির সঙ্গে মিলবে, তাতে (কাজ অনুযায়ী) বড় গুনাহ ও ছোট গুনাহ বা মাকরুহ হবে। তবে ঈমানের দাবি হলো, মুসলিম প্রতিটি কাজ করবে রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসারে। এর ব্যত্যয় নয়। একজন খাঁটি মুমিনের কাছে একটি সুন্নতের দাম সারা পৃথিবীর সব ধনসম্পদের চেয়েও মূল্যবান। উম্মতের কাজ হলো, যে কাজ সে করবে সে কাজে সুন্নত কী আছে, তা তালাশ করে আমল করবে। আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে আওয়াজ বা উচ্চস্বর সৃষ্টি করি। মুখ দ্বারা যেমন আওয়াজ করি, তেমনি শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারাও আমরা বিভিন্ন ইঙ্গিত বহনকারী স্বর সৃষ্টি করি। এর মধ্যে আমরা হাত দ্বারা অনেক কায়দায় আওয়াজ দিয়ে থাকি। হাত দ্বারা কোনো কিছুর ওপর আঘাত করে আওয়াজ করতে পারি। আবার দুই হাতের তালুর মিলনে সমুচ্চারিত কোরাস ছড়িয়ে দিতে পারি। পরেরটিকে আমরা করতালি বলি। এ করতালি দেওয়া, শিস দেওয়ার ক্ষেত্রেও রয়েছে ইসলামের দিকনির্দেশনা। হাত দ্বারা যে আওয়াজ সৃষ্টি হয়, এর বিভিন্ন বিধান রয়েছে। হাত দ্বারা আওয়াজ করা কখনো ইবাদত হয় আবার কখনো গুনাহও হয়।
হাত দ্বারা আওয়াজ করা বৈধ হয় যখন নারীরা ইমামকে ভুল থেকে বাঁচানোর জন্য হাত দ্বারা আওয়াজ দেবে। সাহল ইবনে সাদ আসসায়িদি (রা.) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কী হয়েছে? আমি নামাজের মধ্যে তোমাদের তালি দিতে দেখেছি। জেনে রাখো, নামাজের মধ্যে যদি তোমাদের কোনো সমস্যা সামনে আসে, তাহলে তোমরা তাসবিহ পড়ো। অর্থাৎ সুবহানাল্লাহ, আল্লাহু আকবার ইত্যাদি আর নারীরা তালি দেবে। নামাজের মধ্যে নারীদের তালির নিয়মটা হবে ভিন্ন, তারা ডান হাতকে বাঁ হাতের পিঠের ওপর মারবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৮৪১)
এ হাদিস থেকে আমাদের সামনে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়। প্রথমত, নারীদের আওয়াজও সতর অর্থাৎ নারীদের স্বরও অন্য পুরুষ শোনা ঠিক নয়। তাই রাসুল (সা.) পুরুষকে তাসবিহ বলার শিক্ষা দিয়েছেন আর নারীদের হাতের সাহায্যে আওয়াজ দেওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, নামাজে ডান হাতকে বাঁ হাতের পিঠের ওপর মারবে তার বৈধতা। তৃতীয়ত, হাতের তালির পরিবর্তে রাসুল (সা.) তাসবিহ বলার শিক্ষা দিয়েছেন। এ শিক্ষা নামাজের ভেতর ও বাইরে সব সময় প্রযোজ্য।
করতালি দেওয়া নাজায়েজ হবে, যখন এ করতালি ইবাদতের উদ্দেশ্যে করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কাবার কাছে তাদের নামাজ বলতে শিস দেওয়া আর তালি বাজানো ছাড়া অন্য কোনো কিছুই ছিল না। অতএব এবার নিজেদের কৃত কুফরির আজাবের স্বাদ গ্রহণ করো।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৩৫)
এ আয়াত দ্বারা আমরা জানতে পারি যে তালি দেওয়া হলো মুশরিকদের একটি ইবাদত। শিস দেওয়াও তাদের একটি ইবাদত। সুতরাং এগুলো মুসলিম করতে পারে না। এবং ইবাদত হিসেবে করলে তা বড় গুনাহ হবে।
আর ইবাদত হিসেবে না করে কাউকে উৎসাহ দেওয়ার তালি দেওয়া হারাম না হলেও মাকরুহ তথা অপছন্দনীয়। কেননা করতালি মুশরিকদের একটি ইবাদত এবং অন্য ধর্মের উৎসাহ ও অনুষ্ঠানের একটি সংস্কৃতি। এটি ইহুদি ও খ্রিস্টানদের আনন্দ প্রকাশের পদ্ধতি। (কেফায়াতুল মুফতি : ৯/১১৬)
আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি যার সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪০৩৩)
তা ছাড়া আল্লাহর রাসুল (সা.) তাঁর জীবদ্দশায় বহু অনুষ্ঠান করেছেন এবং বক্তৃতা ও ওয়াজ করেছেন, কোথাও হাতে তালি দেননি। মহানবী (সা.) হাততালির পরিবর্তে মারহাবা, সুবহানাল্লাহ, মাশাআল্লাহ অর্থাৎ তাসবিহ পাঠ করার শিক্ষা দিয়েছেন।
মূলকথা হলো, রাসুল (সা.)-এর সুন্নত হলো তাসবিহ পড়ে কাউকে উৎসাহিত করা।
তবে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যাসবহির্ভূতভাবে মাঝেমধ্যে তালি দেওয়া নাজায়েজ নয়। এ বিষয়ে কেউ কেউ একটি হাদিস স্মরণ করে থাকে। হাদিসটি হলো, জাবের (রা.) বলেন, একদা রাসুল (সা.) নিজ স্ত্রীদের থেকে এক মাসের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেন। যখন ২৯ দিন অতিবাহিত হলো তখন তিনি আমাদের মাঝে আগমন করেন, আমরা সবাই বলতে লাগলাম আজ ২৯ দিন, তখন রাসুল (সা.) নিজ হাতে তিনবার তালি দিলেন আর বললেন, হ্যাঁ, মাস অতিবাহিত হয়ে গেল এবং নিজ আঙুলগুলো একটিকে অন্যটির সঙ্গে আবদ্ধ করেন। (মুসলিম, হাদিস : ১০৮৩১)
এ হাদিস থেকে হাততালি দেওয়া বৈধ বোঝা গেলেও এটি মহানবী (সা.)-এর গোটা জীবনের কর্মপ্রণালী ছিল না।
Fair Use Disclaimer:
=================
This channel may use some copyrighted materials without specific authorization of the owner but contents used here falls under the “Fair Use” as described in The Copyright Act 2000 Law No. 28 of the year 2000 of Bangladesh under Chapter 6, Section 36 and Chapter 13 Section 72. According to that law allowance is made for "fair use" for purposes such as criticism, comment, news reporting, teaching, scholarship, and research. Fair use is a use permitted by copyright statute that might otherwise be infringing. Non-profit, educational or personal use tips the balance in favor of fair use.
"Copyright Disclaimer Under Section 107 of the Copyright Act 1976, allowance is made for -fair use- for purposes such as criticism, comment, news reporting, teaching, scholarship, and research. Fair use is a use permitted by copyright statute that might otherwise be infringing. Non-profit, educational or personal use tips the balance in favor of fair use."
Ещё видео!