শেখ ইসতিয়াক: অকালে ঝরে যাওয়া এক অসাধারণ সঙ্গীত প্রতিভা
আশির দশকের শেষদিক। বাংলা গানের এক স্বর্ণযুগ চলছে। অনুকরণ, অনুসরণ আর উৎসাহের সংমিশ্রণে নতুন নতুন ধারার পথচলার সৃষ্টি হচ্ছে তখন। সেই পথচলার এক শক্তিমান উদাহরণ হয়ে আজও হাজার শ্রোতার কণ্ঠে ও মনে স্থান দখল করে আছেন এক মায়াবী কণ্ঠস্বর, শেখ ইসতিয়াক। তার দরাজ ও অভিমানী কণ্ঠে একেকটি গান যেন হয়ে ওঠেছিল নিস্তব্ধতা ভাঙার হাতিয়ার।
১৯৬০ সালে জন্ম এই গুণী শিল্পীর। ছোটবেলা থেকেই গানটাকে বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছিলেন তিনি। খুব অল্প বয়সেই ধ্রুপদী সংগীতে দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন। ধীরে ধীরে আধুনিক গানের প্রতি ঝুঁকতে থাকেন। গানের পাশাপাশি গিটারেও দারুণ দখল আনতে শুরু করেন। ফলে সুর ও সঙ্গীতায়োজনের প্রচেষ্টা ছিল ছোটবেলা থেকেই। ১৯৭৪ সালের দিকে, মাত্র ১৪ বছর বয়সেই প্রথম ব্যান্ডদল গড়ে তোলেন তিনি। আর ব্যান্ডের নাম রাখলেন ‘সন্ন্যাসী’। বিভিন্ন মঞ্চে, হোটেলে ও সামাজিক অনুষ্ঠানে গান করতে থাকে সন্ন্যাসী। ধীরে ধীরে গিটারিস্ট হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকেন শেখ ইসতিয়াক।
অসম্ভব সুরেলা কণ্ঠ এবং অসাধারণ গায়কীর জন্যই খুব অল্প সময়ে সকলের মন জয় করে নেন শেখ ইসতিয়াক। একসময় বাংলাদেশের মেলোডি কিং নামে অনেক বেশি পরিচিতি লাভ করেন তিনি। একের পর এক জনপ্রিয় গানে কণ্ঠ দিয়ে গিয়েছেন তিনি। ১৯৮৬ সালের দিকে ‘ওগো বিদেশিনী’ চলচ্চিত্রে প্রথম গান গাওয়ার সুযোগ ঘটে শেখ ইসতিয়াকের। সেই থেকে তার পেশাদার শিল্পাঙ্গনে প্রবেশ।
শেখ ইসতিয়াকের সঙ্গীত জীবনে গুণী সুরকার মকসুদ জামিল মিন্টুর বিশেষ অবদান রয়েছে। শেখ ইসতিয়াকের বেশ কয়েকটি অ্যালবামের কাজ করেন মিন্টু। ১৯৮৬ সালের শেষদিকে মকসুদ জামিল মিন্টুর সুরে শেখ ইসতিয়াকের প্রথম অ্যালবাম ‘নন্দিতা’ র কাজ শেষ হয়। অ্যালবামটি প্রকাশ হওয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এর বেশ কয়েকটি গান ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ‘নন্দিতা’ অ্যালবামের ‘নীলাঞ্জনা’, ‘একদিন ঘুম ভেঙে দেখি’, ‘আমার মনের ফুলদানিতে’ গানগুলো আজও মানুষের মুখে মুখে বেজে ওঠে।
শেখ ইসতিয়াকের সর্বমোট ৭টি একক অ্যালবাম বাজারে এসেছিল। শেখ ইসতিয়াকের সুর ও সংগীতে শেষ নিবেদন ‘তুমি অভিমানী’ অ্যালবামটিও বেশ জনপ্রিয়তা পায়। পরবর্তীতে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সাউন্ডটেক থেকে ‘নীলাঞ্জনা’ শিরোনামে আরেকটি অ্যালবাম বের করা হয়, সেখানে শেখ ইসতিয়াকের বেশ কিছু জনপ্রিয় গান একত্র করা হয়।
অসম্ভব প্রতিভাধর এই শিল্পীর সঙ্গীত জীবন খুব একটা দীর্ঘ হয়নি। ১৯৯৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর হঠাৎ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তার এই স্বল্প সঙ্গীত জীবনে আমাদের উপহার দিয়েছেন অসাধারণ সব গান। তার উল্লেখযোগ্য গানগুলোর মধ্যে রয়েছে যেখানে পথের শেষ, নীলাঞ্জনা, আমার মনের ফুলদানিতে, টিপ টিপ বৃষ্টি, ভোরের শিশির, শোন আমি কি সেই, একদিন ঘুম ভেঙে দেখি, ভুল করে যদি ডাকো কোনোদিন, নন্দিতা তোমার কথা আমি, জোছনা রাতে মনটা আমার, ভেবেছি ভুলে যাব ইত্যাদি। বাংলা গানের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন এই শিল্পী। এখনো তার গানগুলো বেজে উঠতে শোনা যায় উঠতি শিল্পীদের কণ্ঠে। অনেক প্রতিষ্ঠিত শিল্পীও প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছেন শেখ ইসতিয়াকের গাওয়া অসংখ্য গানের উপর। আর তার অসংখ্য শ্রোতার প্রাণে জেগে ওঠে শেখ ইসতিয়াকের সেই সুরেলা গানের কলিগুলো -
এলেই যদি কেন চলে যাবে
এখনি, ও তুমি
একটু পরে শুরু হবে টিপটিপ বৃষ্টি
ভিজে যাবে তুমি।।
SOURCE: [ Ссылка ]
Ещё видео!