জ্যাকোবিন কবুতরের দাম পালন পদ্ধতি ও ব্রিডিং | Jacobin Pigeon Price In Bangladesh And India
বাংলাদেশের সবথেকে জনপ্রিয় ফেনসি কবুতর গুলোর মধ্যে জ্যাকোবিন অন্যতম। বিশেষ করে অল্প দামের ফেন্সি কবুতর গুলোর মধ্যে জ্যাকোবিন সবথেকে আকর্ষনীয়। আমাদের আজকের এপিসোড এ জানবো এই জ্যাকোবিন কবুতর এর দাম, জ্যাকোবিন কবুতরের বৈশিষ্ট্য , জ্যাকোবিন কবুতর পালন পদ্ধতি ও ডিম বাচ্চা উৎপাদন নিয়ে বিস্তারিত। আর আপনি যদি একজোড়া কবুতর পালন করেন তবে মেয়েদের একটা নতুন সেট আপ তৈরি করতে খাঁচা এবং অন্যান্য খরচ বাবদ কত টাকা খরচ হতে পারে আর এক জোড়া কবুতর মাসে কত টাকার খাবার খায় সবকিছুর বিস্তারিত জানতে ভিডিওটি শেষ পর্যন্ত উপভোগ করুন।
জ্যাকোবিন পৃথিবীর পুরনো প্রজাতির কবুতর গুলির মধ্যে একটি। ধারণা করা হয়ে থাকে কবুতরটি পনেরশো শতকের মাঝামাঝিতে ভারতের কোথাও বিকশিত হয়েছিল। পরবর্তীতে রাশিয়াতে এদের জাত উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখতে দেখা যায়। আর তখন থেকেই আজ পর্যন্ত শীর্ষস্থান দখল করে আছে। বিভিন্ন দেশে এদের জাত উন্নয়ন করা হলেও এরা যেকোন আবহাওয়াতে বেঁচে থাকতে পারে। জ্যাকোবিন কবুতর টি মূলত প্রদর্শনের জন্য সবথেকে জনপ্রিয়।
এদের ঘাড়ের উপর 5 থেকে 6 টি পালক থাকে। যা মাথার উপর পর্যন্ত বিস্তৃত এই পালক গুলি কে একত্রে হুড hood বলা হয়। হুডের মধ্যে কবুতরটি মাথা লুকিয়ে রাখে। এমন বৈশিষ্ট্যের কারণেই অন্যান্য কবুতরের জাতের থেকে জ্যাকোবিন কবুতর ভিন্নভাবে কবুতর প্রেমীদের মনে জায়গা করে নিয়েছে। জ্যাকোবিন কবুতর গুলো আকারে লম্বাটে এবং পাতলা গঠন বিশিষ্ট হয়ে থাকে। গরে একেকটি কবুতর 14 ইঞ্চির মতো লম্বা হয়। একটি পূর্ণবয়স্ক জ্যাকোবিন কবুতরের ওজন হয় প্রায় 350 গ্রাম । এরা বিভিন্ন কালারের হয়ে থাকে। বিশেষ করে এদের মধ্যে সাদা কালো সিলভার আলমন্ড এই ধরনের কালার গুলো বেশি দেখা যায়। তবে সব কালারের জ্যাকোবিন এর মধ্যে ধবধবে সাদা জ্যাকোবিন গুলোর চাহিদা বাজারে সবচাইতে বেশি।
এবার আসুন জেনে নেই জ্যাকোবিন কবুতর পালন পদ্ধতি এদের ডিম বাচ্চা উৎপাদন পদ্ধতি মানে ব্রিডিং সম্পর্কে বিস্তারিত।
জ্যাকোবিন কবুতর পালন করতে হলে আপনি এদেরকে দুইভাবে পালতে পারেন। প্রথম পদ্ধতিতে হল খাচায় পালন করা। জ্যাকোবিন যেহেতু খুব ভালো উঠতে পারেনা তাই অধিকাংশ মানুষই এদের খাচায় পালন করে। জ্যাকোবিন কবুতরের জন্য সঠিক আকৃতির খাঁচার মাপ হচ্ছে 24 ইঞ্চি বাই 24 ইঞ্চি বাই 20 ইঞ্চি । মানে খাচাটার দৈর্গ হবে 24 ইঞ্চি প্রস্থ হবে 24 ইঞ্চি এবং উচ্চতা হবে 20 ইঞ্চি। এরকম সাইজের একটা খাচায় আপনি এক জোড়া জ্যাকোবিন কবুতর রাখতে পারবেন। আপনার পালন করলে খাঁচার মধ্যে পানির পাত্র খাবারের পাত্র এবং গ্রিড এর পাত্র দিতে হবে। তাছাড়া প্রজননের জন্য একটি করে মাটির মটকা দিতে হবে যার মধ্যে কবুতরগুলো বসে ডিম পাড়তে পারে।
এবারে আসুন জেনে নেই জ্যাকোবিন কবুতরের খাবার কি।
জ্যাকোবিন কবুতরের খাবার
জ্যাকোবিন কবুতরের খাবার তালিকা অন্যান্য কবুতরের মতই। এক একটি প্রাপ্তবয়স্ক জ্যাকোবিন এক দিনে 30 থেকে 50 গ্রাম খাবার খায়। সে ক্ষেত্রে আপনি যদি একজোড়া কবুতর পালন করেন তবে মাসে দুই কেজি পরিমাণ সিডমিক্স এর প্রয়োজন হতে পারে।
জ্যাকোবিন কবুতরের খাবার হিসেবে গম মটর খেশারী ভুট্টা সরিষা এবং ধান এইসব ব্যবহার করা হয়। আসলে একেকটা দেশে একেক রকমের শস্যবীজ বেশি পাওয়া যায় আর সেইসব উৎপাদিত শস্যের উপর নির্ভর করেই বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন খাবার কবুতরকে খাওয়ানো হয় তবে বাংলাদেশ ও ভারতে খাবারগুলোই সবচাইতে বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
গম 40
ভুট্রা 15
মটর ডাব্রি 15
চিনা 2
বাজরাসাদা 5
বাজরালাল 5
কলই 8
কুসুম বীজ 2
কালি মটর 2
সরিষা 1
জ্যাকোবিন কবুতর এর ব্রিডিং বা বাচ্চা উৎপাদন প্রক্রিয়া
হাঁস-মুরগির মতো নর কবুতর মাদী কবুতরের সাথে সহজে জোড়া বাঁধে না। মোটামুটি একই খাঁচায় একসাথে এক সপ্তাহ রেখে দিলে তারপর জোড়া তৈরি হয়। জ্যাকোবিন এর প্রতিটি মাদী কবুতর দুইটি করে ডিম পাড়ে। পেটে ডিম থাকা অবস্থায় এগুলো ডিম পাড়ার 24 ঘন্টা আগে নিষিক্ত হয়ে থাকে। অর্থাৎ যে 16 থেকে 20 ঘণ্টা পর্যন্ত কবুতরের ডিম ডিম্বনালীতে থাকে এসময় এটা নিষিদ্ধ হয়ে থাকে। প্রায় সব রকমের কবুতরের মধ্যেই ছেলে ও মেয়ে উভয় কবুতর পর্যায়ক্রমে ডিমে তা দেয়। জ্যাকোবিন ডিমে তা দেয়া শুরু করলে তার পাঁচ দিন পর ডিম পরীক্ষা করে ডিমগুলো উর্বর কিনা বোঝা যায়। মোবাইলের টর্চ এর সামনে কবুতরের ডিম ধরলে এর ভেতরে যদি লাল রঙের শাখা বা গাছের শেখর এর মতো কোনো কিছুর অস্তিত্ব বুঝতে পারা যায় তখন বুঝতে হবে ওই দিন টা উর্বর এবং ওইটা থেকে বাচ্চা হবে। অন্যদিকে সাত-আট দিন তাদের পরও ডিমের ভেতরে যদি কোনো রকমের রক্তনালী তৈরি না হয় তবে বুঝতে হবে ওই ডিম টা নষ্ট এবং সেটা অনুর্বর ডিম। সাধারণত দ্বিতীয় ডিম পাড়ার পরবর্তী 17 থেকে 18 দিন পর কবুতরের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। এভাবে জ্যাকোবিন কবুতর থেকে বারো মাসে কয়েক জোড়া বাচ্চা উৎপাদন করা যায়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফিল্ডাররা এরকম দামি কবুতরের বাচ্চা উৎপাদন করে আমাদের দেশীয় কবুতরের নিচে দিয়ে। দেশীয় কবুতর কিন্তু ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদনের খুবই এক্সপার্ট আর এজন্যই মানুষজন বিভিন্ন দামি ও বিদেশী জাতের কবুতরের ডিম দেশি কবুতরের নিচে দিয়ে ফুটিয়ে থাকে।
জ্যাকোবিন কবুতরের দাম কত
দামের কথা বলতে গেলে জ্যাকোবিন কবুতরের দাম মূলত এদের hood এর কোয়ালিটির উপর নির্ভর করে। Hood ও শারীরিক গঠনের কোয়ালিটির উপর নির্ভর করে বাংলাদেশে এদের মূল্য 3000 থেকে শুরু করে 15 হাজার টাকা।তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দাম এর থেকেও বেশি হতে পারে জ্যাকোবিন এর সবচেয়ে দামি জাতগুলোর মধ্যে সাদা জ্যাকোবিন অন্যতম এদের দামও তুলনামূলক একটু বেশি। প্রতিজোড়া সাদা রংয়ের ভালো কোয়ালিটির জ্যাকোবিন 5000 থেকে 10000 টাকা দামের বেচাকেনা হয়।
Ещё видео!