ফেইসবুক: [ Ссылка ]
ভয়েস আর্ট ইমেইল: voice.art@outlook.com
কবিতা : খালেদ (Poem : Khaled)
কবি : কাজী নজরুল ইসলাম (Poet : Kazi Nazrul Islam)
আবৃত্তি : ফয়সাল আজিজ (Recitation : Foysal Aziz)
খালেদ! খালেদ! শুনিতেছে নাকি সাহারার আহা-জারী?
কত ‘ওয়েসিস‘ রচিল তাহার মরু-নয়নের বারি।
মরীচিকা তার সন্ধানী-আলো দিকে দিকে ফেরে খুঁজি
কোন নিরালায় ক্লান্ত সেনানী ডেরা গাড়িয়াছ বুঝি!
বালু-বোররাকে সওয়ার হইয়া ডাক দিয়া ফেরে ‘লু’,
তব তরে হায়! পথে রেখে যায় মৃগীরা মেশক-বু!
খর্জুর-বীথি আজিও ওড়ায় তোমার জয়ধ্বজা,
তোমার আশায় বেদুইন-বালা আজিও রাখিছে রোজা।
‘মোতাকারিব‘-এর ছন্দে উটের সারি দুলে দুলে চলে,
দু-চোখ তাদের দিশাহারা পথে আলেয়ার মতো জ্বলে।
‘খালেদ! খালেদ!’ পথ-মঞ্জিলে ক্লান্ত উটেরা কহে,
‘বণিকের বোঝা বহা তো মোদের চিরকেলে পেশা নহে!’
‘সুতুর-বানের‘ বাঁশি শুনে উট উল্লাস-ভরে নাচে,
ভাবে, নকিবের বাঁশরির পিছে রণ-দামামাও আছে।
ন্যুব্জ এ পিঠ খাড়া হত তার সওয়ারের নাড়া পেয়ে,
তলওয়ার তীর গোর্জ নেজায় পিঠ যেত তার ছেয়ে।
খুন দেখিয়াছে, তূণ বহিয়াছে, নুন বহেনি কো কভু!
খালেদ! তোমার সুতুর-বাহিনী—সদাগর তার প্রভূ!
* * *
বালু ফেড়ে ওঠে রক্ত-সূর্য ফজরের শেষে দেখি,
দুশমান-খুনে লাল হয়ে ওঠে খালেদী আমামা এ কী!
খালেদ! খালেদ! ভাঙিবে নাকি ও হাজার বছরি ঘুম?
মাজার ধরিয়া ফরিয়াদ করে বিশ্বের মজলুম!–
শহীদ হয়েছ? ওফাৎ হয়েছে? ঝুটবাত! আলবৎ!
খালেদের জান কব্জ করিবে ওই মালেকুল-মৌৎ?
বছর গিয়াছে গেছে শতাব্দী যুগযুগান্ত কত,
জালিম পারসি রোমক রাজার জুলুম সে শত শত
রাজ্য ও দেশ গেছে ছারেখারে! দুর্বল নরনারী
কোটি কোটি প্রাণ দিয়াছে নিত্য কৎল-গাহেতে তারই!
উৎপীড়িতের লোনা আঁসু-জলে গলে গেল কত কাবা,
কত উজ তাতে ডুবে মলো হায়, কত নূহ্ হল তাবা!
সেদিন তোমার মালেকুল-মৌৎ কোথায় আছিল বসি?
কেন সে তখন জালিম রাজার প্রাসাদে প্রাসাদে পশি
বেছে বেছে ওই ‘সঙ্গ্-দিল‘দের কব্জ করেনি জান?
মালেকুল-মৌৎ সেদিনও মেনেছে বাদশাহী ফরমান!–
মক্কার হাতে চাঁদ এল যবে তকদিরে আফতাব
কুল-মখলুক দেখিতে লাগিল শুধু ইসলামি খাব,
শুকনো খবুজ খোর্মা চিবায়ে উমর দারাজ-দিল
ভাবিছে কেমন খুলিবে আরব দিন-দুনিয়ার খিল, –
এমন সময় আসিল জোয়ান হাথেলিতে হাথিয়ার,
খর্জুর-শিষে ঠেকিয়াছে গিয়া উঁচা উষ্ণীয় তার!
কব্জা তাহার সব্জা হয়েছে তলওয়ার-মুঠ ডলে,
দু-চোখ ঝালিয়া আশায় দজ্লা ফোরাত পড়িছে গলে!
বাজুতে তাহার বাঁধা কোর-আন, বুকের দুর্মদ বেগ,
আলবোরজের চূড়া গুঁড়া-করা দস্তে দারুণ তেগ।
নেজার ফলক উল্কার সম উগ্রগতিতে ছোটে,
তীর খেয়ে তার আশমান-মুখে তারা-রূপে ফেনা ওঠে।
দারাজ দস্ত যেদিকে বাড়ায় সেইদিক পড়ে ভেঙে,
ভাস্কর-সম যেদিকে তাকায় সেইদিক ওঠে রেঙে!
ওলিদের বেটা খালেদ সে বীর যাহার নামের ত্রাসে
পারস্য-রাজ নীল হয়ে উঠে ঢলে পড়ে সাকি-পাশে!
রোম-সম্রাট শারাবের জাম-হাতে থরথর কাঁপে,
ইস্তাম্বুলি বাদশার যত নজ্জুম আয়ু মাপে!
মজলুম যত মোনাজাত করে কেঁদে কয় ‘এয়্ খোদা,
খালেদের বাজু-শমশের রেখো সহি-সালামতে সদা।’
আজরাইলও সে পারেনি এগুতে যে আজাজিলের আগে,
ঝুঁটি ধরে তার এনেছে খালেদ, ভেড়ি ধরে যেন বাঘে!
মালেকুল-মৌৎ করিবে কব্জ রুহ্ সেই খালেদের?–
হাজার হাজার চামড়া বিছায়ে মাজারে ঘুমায় শের!
...।
...।
...।
খালেদ! খালেদ! জিন্দা হয়েছে আবার হিন্দা বুড়ি,
কত হামজারে মারে জাদুকরি, দেশে দেশে ফেরে উড়ি!
ও কারা সহসা পর্বত ভেঙে তুহিন স্রোতের মতো,
শত্রুর শিরে উন্মদবেগে পড়িতেছে অবিরত!
আগুনের দাহে গলিছে তুহিন আবার জমিয়া উঠে,
শির উহাদের ছুটে গেল হায়! তবু নাহি পড়ে টুটে!
ওরা মরক্কো মরদের জাত মৃত্যু মুঠার পরে,
শত্রুর হাতে শির দিয়া ওরা শুধু হাতে পায়ে লড়ে!
খালেদ! খালেদ! সর্দার আর শির পায় যদি মূর
খাসা জুতো তারা করিবে তৈরি খাল দিয়া শত্রুর!
খালেদ! খালেদ! জাজিরাতুল সে আরবের পাক মাটি
পলিদ হইল, খুলেছে এখানে যুরোপ পাপের ভাঁটি!
মওতের দারু পিইলে ভাঙে না হাজার বছরি ঘুম?
খালেদ! খালেদ! মাজার আঁকড়ি কাঁদিতেছে মজলুম।
খোদার হাবিব৯ বলিয়া গেছেন আসিবেন ইসা ফের,
চাই না মেহেদি, তুমি এসো বীর হাতে নিয়ে শমশের।
Ещё видео!