গীতাশাস্ত্রমিদং পুণ্যং যঃ পঠেৎ প্রযতঃ পুমান্ ।
বিষ্ণোঃ পদমবাপ্নোতি ভয়শোকাদিবর্জিতঃ।।১।।
অনুবাদঃ শ্রীমদ্ভগবদ্ গীতার নির্দেশকে যথাযথভাবে অনুসরণ করতে পারলে, অতি সহজেই সমস্থ ভয় ও উদ্ভেগ থেকে মুক্ত হওয়া যায়। এই জীবনে ভয় ও শোকাদি বর্জিত হয়ে পরবর্তী চিন্ময় স্বরূপ অর্জন করা যায়।
গীতাধ্যায়নশীলস্য প্রাণায়মপরস্য চ।
নৈব সন্তি হি পাপানি পূর্বজন্মকৃতানি চ।।২।।
অনুবাদঃ কেউ যদি আন্তরিকভাবে এবং অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে ভগবদ্ গীতা পাঠ করে, তা হলে ভগবানের করুণায় তার অতীতের সমস্ত পাককর্মের ফল তাকে প্রভাবিত করে না।
মলিনে মোচনং পুংসাং জলস্নানং দিনে দিনে।
সকৃদ্ গীতামৃতস্নানং সংসারমলনাশনম্।।৩।।
অনুাবদঃ প্রতিদিন জলে স্নান করে মানুষ নিজেকে পরিচ্ছন্ন করতে পারে, কিন্তু কেউ যদি ভগবদ্ গীতার গঙ্গাজলে একটি বারও স্নান করে, তা হলে তার জড় জীবনের মলিনতা একেবারেই বিনষ্ট হয়ে যায়।
গীতা সুগীতা কর্তব্যা কিমন্যৈঃ শাস্ত্রবিস্তরৈঃ।
যা স্বয়ং পদ্মনাভস্য মুখপদ্মাদ্ বিনিসৃতা।।৪।।
অনুবাদঃ যেহেতু ভগবদ্ গীতার বাণী স্বয়ং পরম পুরুষোত্তম ভগবানের মুখনিঃসৃত বাণী, তাই এই গ্রন্থ পাঠ করলে আর অন্য কোন বৈদিক সাহিত্য পড়বার দরকার হয় না। গভীর নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে নিয়মিতভাবে ভগবদ্ গীতা শ্রবণও কীর্তন করলে আমাদের অন্তর্নিহিত ভগবদ্ভক্তির স্বাভাবিক বিকাশ হয়।
বর্তমান জগতে মানুষের নানা রকম কাজে এতই ব্যস্ত থাকে যে, তাদের পক্ষে সমস্ত বৈদিক সাহিত্য পাঠ করা সম্ভব নয়।সমস্ত বৈদিক সাহিত্য পড়বার প্রয়োজনও নেই। এই একটি গ্রস্থ ভগবদ্ গীতা পাঠ করলেই মানুষ সমস্ত বৈদিক জ্ঞানের সারমর্ম উপলব্দি করতে পারবে, কারণ ভগবদ্ গীতা হচ্ছে বেদের সার এবং এই গীতা স্বয়ং ভগবানের মুখনিঃসৃত উপদেশ বাণী।
ভারতামৃতসর্বস্বং বিষ্ণুবক্ত্রাদ্ বিনিঃসৃতম্।
গীতাগঙ্গোদকং পীত্বা পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে।।৫।।
অনুবাদঃ গঙ্গাজল পান করলে অবধারিতভাবে মুক্তি পাওয়া যায়, আর যিনি ভগবদ্ গীতার পুণ্য পীযূষ পান করেছেন, তাঁর কথা আর কি বলবার আছে? ভগবদ্ গীতা হচ্ছে মহাভারতের অমৃতরস, যা আদিবিষ্ণু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজেই বলে গেছেন।
ভগবদ্ গীতা পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত, আর গঙ্গা ভগবানের চরণপদ্ম থেকে উদ্ভূত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ভগবানের মুখ ও পায়ের মধ্যে অবশ্য কোন পার্থক্য নেই। তবে আমাদের এটি বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, ভগবদ্ গীতার গুরুত্ব গঙ্গার চেয়েও বেশি।
সর্বোপনিষদো গাবো দোগ্ধা গোপালনন্দনঃ।
পার্থো বৎসঃ সুধীর্ভোক্তা দুগ্ধং গীতামৃতং মহৎ।।৬।।
অনুবাদঃ এই গীতোপনিষদ্ ভগবদ্ গীতা সমস্ত উপনিষদের সারাতিসার এবং তা ঠিক একটি গাভীর মতো এবং রাখাল বালকরুপে প্রসিদ্ধ ভগবান শ্রীকৃষ্ণই এই গাভীকে দোহন করেছেন। অর্জুন যেন গোবৎসের মতো এবং জ্ঞানীগুণী ও শুদ্ধ ভক্তেরাই ভগবদ্ গীতার সেই অমৃতময় দুগ্ধ পান করে থাকেন।
একং শাস্ত্রং দেবকীপুত্রগগীতম্
একো দেবো দেবকীপুত্র এব।
একো মন্ত্রস্তস্য নামানি যানি
কর্মাপ্যেকং তস্য দেবস্য সেবা।।৭।।
অনুবাদঃ বর্তমান জগতে মানুষ আকুলভাবে আকাঙ্ক্ষা করছে একটি শাস্ত্রের, একক ভগবানের, একটি ধর্মের এবং একটি বৃত্তির। তাই, একং শাস্ত্রং দেবকীপুস্ত্রগীতম্- সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য সেই একক শাস্ত্র হোক ভগবদ্ গীতা। একো দেবো দেবকীপুত্র এব- সমগ্র বিশ্বচরাচরের একক ভগবান হোন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। একো মন্ত্রসস্তস্য নামানি- একক মন্ত্র, একক প্রার্থনা, একক স্তোত্র হোক তাঁর নাম কীর্তন-
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।৮।।
এবং কর্মাপ্যেকং তস্য দেবস্য সেবা- সমস্ত মানুষের একটিই বৃত্তি হোক- পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবা করা।।
শ্রীল ব্যাসদেব কৃত গীতা- মাহাত্ম্য
গীতা সগীতা কর্তব্যা কিমন্যৈঃ শাস্ত্রবিস্তরৈঃ।
যা স্বয়ং পদ্মনাভস্য মুখপদ্মাদ্বিনিঃসৃতা।।১।।
সর্বশাস্ত্রময়ী গীতা সর্বদেবময়ী যতঃ
সর্বধর্মময়ী যস্মাত্তস্মাদেতাং সমভ্যসেৎ।।২।।
অনুবাদঃ গীতা স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের মুখপদ্ম থেকে নিঃসৃত হয়েছেন। সেই গীতা সুন্দরভাবে পাঠ করতে হবে। অন্যান্য বহু রকমের শাস্ত্রের প্রয়োজন নেই। যেহেতু শ্রীমদ্ভাগবদ্ গীতা সর্বশাস্ত্রময়ী, সর্বদেবময়ী ও সর্বধর্মময়ী, সুতরাং গীতা অভ্যাস করা একান্ত কর্তব্য।
শালগ্রামশিলাগ্রে তু গীতাধ্যায়ং পঠেত্তু যঃ।
মন্বন্তরসহস্রাণি বসতে ব্রহ্মণঃ পুরে।।৩।।
হত্বা হত্বা জগৎ সর্বং মুষিত্বা সচরাচরম্।
পাপৈর্ন লিপ্যতে চৈব গীতাধ্যায়ী কথঞ্চন।
তেনেষ্টং ক্রতুভিঃ সর্বৈর্দত্তং তেন গবাযুতম্।।৪।।
গীতামভ্যস্যতা নিত্যং তেনাপ্তং পদমব্যয়ম্।।৫।।
অনুবাদঃ যিনি শালগ্রাম শিলার সামনে গীতাধ্যায় পাঠ করেন, তিনি সহস্র মন্বন্তর ব্রহ্মলোকে বাস করেন। যদি কোন ব্যক্তি বারংবার জগৎ নাশ বা চৌর্য-কর্ম করে, এমন জনও গীতাধ্যায়ী হলে কোন প্রকার পাপে লিপ্ত হয় না। উপরন্তু তিনি সর্বজ্ঞ হন এবং দশহাজার গো-দানের ফল লাভ করেন। প্রত্যহ গীতাধ্যায়ী ব্যক্তি অভয়পদ প্রাপ্ত হন।
গীতাধ্যায়ং পঠেদ্ যস্তু শ্লোকং শ্লোকার্ধমেব বা।
ভবপাপবিনির্মুক্তো যাতি বিষ্ণোঃ পরং পদম্।।৬।।
অনুবাদঃ যিনি গীতার একটি অধ্যায়, একটি শ্লোক কিংবা অর্ধ শ্লোক মাত্র পাঠ করেন, তিনি সংসার-পাপ থেকে মুক্ত হয়ে বিষ্ণুধামে গমন করেন।
যো নিত্যং বিশ্বরূপাখ্যমধ্যায় পঠতি দ্বিজঃ।
বিভূতিং দেবদেবস্য তস্য পুণ্যং বদাম্যহম্।।৭।।
বেদৈরধীতৈর্যৎ পুণ্যং সেতিহাসৈঃ পুরাতনৈঃ।
শ্লোকেনৈকেন তৎ পুণ্যং লভতে নাত্র সংশয়ঃ।।৮।।
আব্রহ্মস্তম্ভপর্যন্তং জগত্তৃপ্তিং করোতি সঃ।
বিশ্বরূপং সদাধ্যায়ং বিভূতিঞ্চ পঠেত্তু যঃ।।৯।।
অনুবাদঃ যে ব্রাহ্মণ ভগবদ্ গীতার শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপ নামক একাদশ অধ্যায় ও বিভূতিযোগ নামক দশম অধ্যায় নিত্য পাঠ করেন, আমি এখন তাঁর পুণ্যের কথা বলছি। সমগ্র বেদ, ইতিহাস, পুরাণ অধ্যয়ন করলে যে পুণ্য হয় এক শ্লোকেই সেই পুণ্য হয়ে থাকে। যিনি প্রতিদিন বিশ্বরূপ ও বিভুতিযোগ নামক অধ্যায় পাঠ করেন তিনি আব্রহ্ম স্তম্ভ পর্যন্ত জগতের প্রীতি সাধন করেন।
#banglageeta_path #bengaligita #গীতাপাঠ_বাংলা_অনুবাদ
Ещё видео!