সুন্নতি বিবাহের মোহরানা কত?,।আল্লামা মামুমুল হক হাফিঃ,।ইসলামিক প্রশ্নোত্তর পর্ব-৯
বিয়ের দেনমোহর আবশ্যিক বিষয়, শুধু লেখার জন্য নয় বিয়ের দেনমোহর আবশ্যিক বিষয়, শুধু লেখার জন্য নয়
পবিত্র কোরআন ও হাদিসে দেনমোহর দেওয়ার ব্যাপারে এবং এতে অবহেলা না করতে জোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিয়ের শর্ত হলো- দেনমোহর, স্ত্রীর ভরণপোষণ, তার ইজ্জত-আবরুর হেফাজত ইত্যাদি।
সুতরাং যথাসময়ে এসব পূরণ করতে হবে। পবিত্র কোরআনে দেনমোহর আদায়ের বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নারীদেরকে সন্তুষ্টচিত্তে মোহর প্রদান করো। ’ -সূরা নিসা: ৪
ইসলামে মোহরমুক্ত কোনো বিয়ের অস্তিত্ব নেই। কেননা মোহর বিয়ের জন্য আবশ্যকীয় বিধানের একটি।
বিয়ের সময় যদি মোহরের কথা উল্লেখ নাও করা হয় তথাপি মোহর আবশ্যক। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) জীবনে যে এগারোটি বিয়ে করেছিলেন, তার সবগুলোতেই তিনি মোহর সুচারুভাবে প্রদান করেছেন।
এমনিভাবে সাহাবারাও নিজ স্ত্রীদের মোহর প্রদানে গড়িমসি করেননি। মোহরের গুরত্ব সম্পর্কে প্রচুর হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
দেনমোহরের বিষয়টি হালকাভাবে নিয়ে লোক দেখানো ‘অধিক মোহর’ ধার্য করাতে কোনো বরকত নেই। বরং তা অহংকারের পরিচায়ক। বরকতপূর্ণ বিবাহের বর্ণনা দিতে গিয়ে উম্মাহাতুল মুমিনীন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘সবচেয়ে বরকতময় বিয়ে হচ্ছে সুন্নতি বিয়ে, অর্থাৎ যে বিয়েতে খরচ কম হয় এবং কোনো জাঁকজমক থাকে না। ’ -মিশকাত শরিফ
কোরআনের আয়াত ও হাদিস দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায়, দেনমোহর পুরুষের ওপর স্ত্রীর ঋন এবং এটা আদায় করা ওয়াজিব। অতএব তা আদায় না করলে স্বামী গোনাহগার হবেন এবং স্ত্রীর নিকট এই ঋণ অবশিষ্ট থেকে যাবে। তবে হ্যাঁ, যদি স্ত্রী স্বেচ্ছায় মোহরের দাবী ছেড়ে দেয়, তবে স্বামীর ওপর এর বাধ্যকতা অবশিষ্ট থাকবে না। কিন্তু স্ত্রীকে মোহর ক্ষমা করে দেওয়ার ব্যাপারে বাধ্য করা কিংবা মোহর আদায় করতে অস্বীকৃতি জানানো- অমার্জনীয় অপরাধ।
এ প্রসঙ্গে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা স্ত্রীদেরকে খুশিমনে মোহর দিয়ে দাও, তারা যদি খুশি হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ করো। ’ -সূরা নিসা: ৪
দেনমোহর পরিশোধের ব্যাপারে আমাদের মধ্যে রয়েছে চরম অজ্ঞতা কিংবা সজ্ঞান উদাসীনতা। নিয়মিত নামাজ-রোজা আদায় করেন এমন অনেক মানুষও দেনমোহরের বিষয়ে সচেতন নন। এ বিষয়ে উদাসীনতা এতো প্রকট যে, তারা নফল নামাজ পড়াকে যতোটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন, স্ত্রীর মোহর আদায়কে তার সিকিভাগও গুরুত্ব দেন না।
এ ছাড়া দেনমোহর নিয়ে আরও ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। যেমন বরের এক লাখ টাকা দেনমোহর পরিশোধের ক্ষমতা আছে, কিন্তু কাবিননামায় কনে পক্ষের সামাজিক মর্যাদা রক্ষার অজুহাতে জোরপূর্বক লেখানো হয় আরও বেশি। কনেপক্ষ ভাবে, মোহরানার অর্থ বেশি হলে বর কখনও কনেকে তালাক দিতে পারবে না। আর ছেলের পক্ষ ভাবে, যতো খুশি মোহরানা লিখুক। ওটা তো আর পরিশোধ করতে হবে না। এমন মনোভাব কোনোভাবেই কাম্য নয়।
মোহর পরিশোধ না করার নিয়তে যে স্বামী অধিক পরিমাণ মোহর নির্ধারণপূর্বক স্ত্রীকে বিয়ে করে তার সঙ্গে দাম্পত্য জীবন শুরু করে, সেটা আসলে প্রতারণার মাধ্যমে দাম্পত্য জীবন শুরুর শামিল। কেননা, দেনমোহরের কারণেই স্ত্রী তার স্বামীর জন্য হালাল হয়েছিল। অতএব দেনমোহরই যেখানে পরিশোধ করা হলো না, সেখানে স্ত্রীর সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক হালাল হয় কিভাবে?
তাই যতটুকু দেনমোহর দেওয়ার সামর্থ থাকে ততটুকু দেনমোহরই নির্ধারণ করা উচিত।
Ещё видео!