নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন ভারত বর্ষ তথা বাংলার ইতিহাসের শেষ স্বাধীন নবাব। জেনি 1733 সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল সৈয়দ আহমেদ এবং মাতার নাম আমিনা বেগম। নবাব সিরাজ ছিলেন তার পিতামাতার প্রথম সন্তান। জন্মের পর সিরাজের নাম ছিল মির্জা মোহাম্মদ। অর্থাৎ নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রকৃত নাম মির্জা মোহাম্মদ। সিরাজউদ্দৌলার জন্মের ঠিক পরেই তার দাদু আলীবর্দী খান নবাব সুজাউদ্দৌলা সেনাপতি থেকে পদোন্নতি সাহায্যে বিহারের শাসনকর্তা নায়েক নাজিম নিযুক্ত হন। সেই জন্য সিরাজের দাদু তাকে সর্বদা খুব ভালোবাসতেন। এমনকি সিরাজের জন্মের পর থেকেই তিনি তার দাদু আলীবর্দী খানের কাছেই মানুষ হন। 1752 খ্রিস্টাব্দে নবাব আলীবর্দী খান সিরাজকে মুর্শিদাবাদের নবাব হিসেবে ঘোষণা করেন। এবং সেই সঙ্গে তিনি তার নাম দিলেন সিরাজ উদ দৌলা যার অর্থ হলো রাষ্ট্রের প্রদীপ। এছাড়াও দাদু আলীবর্দী খান সিরাজকে মনসুর আল মুলক উপাধি দিয়েছিলেন। এই মনসুরুল মূলক থেকেই মনসুরগঞ্জের উৎপত্তি। এই মনসুরগঞ্জে এক সময় ছিল নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রাসাদ। যে প্রাসাদ সেই সময়ে বিশ্বের বহু স্থাপত্যশৈলীকে হার মানাত।
জন্ম থেকেই সিরাজের জীবন ছিল অতি রহস্যময়। সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন মোগল সম্রাট শাহজাহানের মত সৌন্দর্য প্রিয়। মুন্সিগঞ্জ প্রাসাদ এবং হীরাঝিল প্রাসাদ ছিল তারই প্রমাণ এই দুই প্রাসাদের বাইরে এবং ভেতরের দৃশ্য ছিল অসামান্য কারুকাজ করা এই প্রাসাদের বাইরে এবং ভেতরে ছিল কৃত্রিম ঝরনা আর ছিল বিভিন্ন প্রকার ভাসমান উপভোগ্য দৃশ্য। সেই সময়ে ব্রিটিশ ঐতিহাসিক আর মেয়র মুর্শিদাবাদে এসেছিলেন তাঁর লেখা থেকে জানা যায় যে নগরীর মধ্যভাগে মুন্সীগঞ্জে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সিরাজউদ্দৌলার মনমুগ্ধকর এই প্রাসাদ ছিল স্বর্গতুল্য এই প্রাসাদের দরবার হল টি ছিল এত বড় যে তার মধ্যে 34 জন ইউরোপিয়ান রাজারা অনায়াসেই রাজত্ব চালাতে পারতেন।
আরো রহস্যময় ছিল তার বৈবাহিক সম্পর্ক বেশ কিছু বই থেকে আমি সিরাজের চারটি স্ত্রীর সন্ধান পেয়েছি যার মধ্যে বিবাহিত স্ত্রী সংখ্যা ছিল দুজন আর দুজন ছিল নামে মাত্র তার স্ত্রী। নবাব সিরাজের প্রথম স্ত্রীর নাম ছিল ওমদাত উন্নিশা। তিনি ছিলেন প্রথম সিরাজের নিকাহ করা স্ত্রী। এই প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে সিরাজের সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিল না। মোহনলালের ভগিনী মাধবী হীরা বা আলেয়া ছিলেন সিরাজের দ্বিতীয় বিবাহিত স্ত্রী। সিরাজের দাদু আলীবর্দী খান নিজেই এই বিবাহ দিয়েছিলেন। এরপরে সিরাজ পুঁজিবাজার নামে এক রহস্যময়ী নারীর প্রেমে পড়েন এবং তাকে সেখানে 5 লক্ষ টাকা দিয়ে দিল্লির সম্রাটের কাছ থেকে কিনে এনেছিলেন। কিন্তু তাদের এই সম্পর্ক বেশি দিন টেকেনি। অবশ্য ফয়েজির সঙ্গে সিরাজের কখনো বিয়ে হয়নি। হৈচই বা প্রয়োজনে মৃত্যুর পর সিরাজ লুৎফুন্নেসা নামক অন্তঃপুরে ক্রীতদাসীর প্রেমে পড়েন। এই লুৎফুন্নেসা বালুপো ছিল সিরাজের সুখ দুঃখের চির সাথী। সিরাজ এবং লুৎফার এক কন্যা সন্তান ছিল যার নাম ছিল উম্মত জহুরা বা উম্মে জহুরা।
1756 খ্রিস্টাব্দের 15 ই এপ্রিল 23 বছর বয়সে ' শাহ কুলী খান মির্জা মোহাম্মদ হায়বৎ জংবাহাদুর সিরাজ উদ দৌলা। উপাধি ধারণ করে বাংলা-বিহার-উরিষ্যা তথা মুর্শিদাবাদের নবাব সিংহাসনে আরোহন করেন বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব নবাব সিরাজউদ্দৌলা। দুর্ভাগ্যক্রমে ওই দিন থেকেই সিরাজের জীবনে দুর্ভাগ্যের কালোমেঘ ক্রমশ ঘনীভূত হতে থাকে। সিরাজের আপন বড় মাসী ঘষেটি বেগম জান কোন সন্তান ছিল না তিনি সর্বদা সিরাজকে হিংসা করতেন তার প্রধান কারণ ছিল নবাব আলীবর্দী খান তার ছোট বোনের পত্র অর্থাৎ সিরাজকে নিজে অপেক্ষা বেশি ভালবাসতেন এবং সিরাজ যখন সিংহাসন লাভ করলেন তখন ঘষেটি বেগম সিরাজের সবচেয়ে বড় শত্রুতে পরিণত হল। অবশ্য এর কিছুদিন আগেই হোসেন কলি খানকে হত্যার পরে থেকেই সিরাজ তার মাসির সবচেয়ে বড় শত্রুতে পরিণত হয়েছিলেন।
এরপর সিরাজের মাসি ঘষেটি বেগম রবার্ট ক্লাইভ জগৎশেঠ মীরজাফর রায় দুর্লভ রায় বল্লভ এদের চক্রান্তে 1757 খ্রিস্টাব্দে 23 শে জুন মুর্শিদাবাদ থেকে কিছুটা দূরে নদীয়া পলাশী নামক এক স্থানে আম বাগানের মধ্যে ব্রিটিশদের সঙ্গে সিরাজ এক যুদ্ধে লিপ্ত হন। ইতিহাসের পাতায় এই যুদ্ধ পলাশীর যুদ্ধ নামে খ্যাত। মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতা এই যুদ্ধে নবাব সিরাজ শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন। এবং তিনি তা হলো অকর্মণ্য বিশ্বাসঘাতক উজির ওমরাহ ওদের কথা মত মুর্শিদাবাদ ছেড়ে পলায়ন করলেন যাতে গোপনে ফরাসিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পুনরায় মুর্শিদাবাদে ফিরে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যায়। কিন্তু প্রথম অধ্যায় দানা সহ নামে এক ফকিরের চক্রান্তে তিনি ধরা পড়লেন। মীরজাফরের ছেলে মিলনের আদেশে মোহাম্মদী বেগ তাকে ছুরি দিয়ে খন্ড-বিখন্ড করে হত্যা করলেন। এর মধ্যে দিয়েই বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার মৃত্যু হল আর এই মৃত্যুর মধ্য দিয়েই স্বাধীনতার সূর্য অস্ত গেল। ভারত বর্ষ হলো পরাধীন। প্রায় একশত 90 বৎসর ব্রিটিশদের গোলামী খাটার পর বহু কষ্টে ভারত বর্ষ 1947 সালের 15 ই আগস্ট শুক্রবার স্বাধীনতা অর্জন করল। কিন্তু তার মধ্যেই ভারতবর্ষের যা ক্ষতি হবার হয়ে গিয়েছে। আজ প্রায় স্বাধীনতার 73 বছর পার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমরা কি আজও স্বাধীন?
Ещё видео!